Header Ads

কৈশোরের চাহিদা


http://tofazzelbd.blogspot.com/2017/09/koishor.html

কৈশোর হচ্ছে শারীরিক , মানসিক, ও সামাজিক পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। আগেই আলোচনা করা হয়েছে যে, শারীরিকভাবে কিশোর - কিশোরীর মধ্যে বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা দেয়।
সামাজিকভাবে অন্যের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতার পরিবর্তন হয়। যেমন বড়রা মনে করে কিশোর বয়সটা হলো এক অস্বাভাবিক ঝামেলা। এসময় তাদেরকে পাত্তা দিতে নেই। তাই কোন ক্ষেত্রেই তাদেরকে মূল্যায়ন করা হয় না।  মানসিকভাবে কিশোর কিশোরীদের মধ্যে শান্ত, গম্ভীর, চঞ্চল। অপরাধপ্রবন ইত্যাদি আচরন করবে, তাদের মন মাসসিকতা কেমন হবে, তার অধিকাংশই নির্ভর করে কৈশোরের বিভিন্ন চাহিদা ও তার পরিতৃপ্তির ওপর।

মনোবিজ্ঞানী আব্রাহাম মাসলোর মতে মানুষের মধ্যে অত্যন্ত সাত ধরনের চাহিদা রয়েছে যেমন- 
  • বেঁচে থাকার চাহিদা
  • নিরাপত্তার চাহিদা
  • দলবদ্ধতার চাহিদা
  • আত্মাভিমানের চাহিদা
  • বুদ্ধিবৃত্তি অর্জনের চাহিদা
  • সৌন্দর্য বোধের চাহিদা
  • আত্তবিধৃতির চাহিদা

এর মধ্যে নিরাপত্তার অভাব কিশোরদের জীবনে আচরণগত পরিবর্তনের এক বিরাট নির্ধারক। এ কারনেই তাদের মধ্যে অস্থিরতা, স্থিরতা বা অতিমাত্রায় প্রত্যাহার প্রবণতার সৃষ্টি হয়। একইভাবে দলবদ্ধতার চাহিদা  বা আত্মঅভিমানের চাহিদা কিশোরদের মধ্যে নানা রকম অপরাধ প্রবণতা বা অপরাধ সচেতনতা সৃষ্টি করে।  অর্থাৎ উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া না গেলে এই চাহিদা গুলো তাদের মধ্যে সবসময়ই বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। বুদ্ধিবৃত্তি অর্জন বা সৌন্দর্যবোধ অনেক কিশোরের মধ্যেই এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের সৃষ্টি করে।  এবয়স থেকেই তারা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। অর্থাৎ উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া না গেলে এই চাহিদাগুলো তাদের মধ্যে সবসময়ই বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। বুদ্ধিবৃত্তি অর্জন বা সৌন্দর্যবোধ অনেক কিশোরের মধ্যেই এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের সৃষ্টি করে। এ বয়স থেকেই তারা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং কখনও কখনও পারিপার্শ্বিক অবস্থা তথা বৈরি পরিবেশের কারনে তারা প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি বিদ্রোহও ঘোষণা করে।
আসলে কিশোর বয়স হচ্ছে এমন একটি সময়, যখন নানারুপ সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আবার উচ্ছ্বাল আনন্দে জীবন ভরেও ওঠে। ফলে কিশোর কিশোরীদের মধ্যে বিভিন্ন আচরণগত জটিলতা বা অপরাধ প্রবণতা দেখা দেয়। তবে এ বয়সে সবাই যে অপরাধ করবে তা নয়।
কিশোর কিশোরীদের মধ্যে বিভিন্ন রকম অপরাধের প্রচলন রয়েছে যেমন- আক্রমণ ধরমিতা, স্কুল পালানো, মিথ্যা বলা, চুরি করা, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, যৌন অপরাধ, অবাধ্যতা, মারধর করা, ছোটদের ওপর অত্যাচার করা ইত্যাদি কমবেশি অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। এ অপরাধগুলো বয়ঃসন্ধিকালে এবং কৈশোরের একটি সাধারন ধর্ম। এগুলো নিয়ে তেমন চিন্তিত হওয়ার কোন কারন নেই। তবে মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে অবশ্যই তা সুদূর প্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।
https://tofazzelbd.blogspot.com/

অনেক সময় দরিদ্র পরিবারের কৈশোরের নব যৌবনের আবেদনে কিশোর কিশোরীরা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে পিতা মাতার অবাধ্য হয়ে সবার অজান্তেই আবেগবশত বিয়ে করে বসে। এ বিয়ে কিন্তু ২-১ বছরের মাথায় ভেঙ্গেও যায়। অথবা অভিভাবক মহলে অসচেতনতার ফলে কখনও কখনও ধনী দরিদ্র যে কোন পরিবারেই তারা যৌন অপরাধ করে বসে।
তাই সাধারনভাবে বলা যায়, বিদ্যালয়গামী কিশোর কিশোরীদের এ আচরণগুলোর জন্য দায়ী হচ্ছে শিখক তথা অভভাবক সচেতনাতার অভাব। বিদ্যালয়ের বৈরি পরিবেশ, শিক্ষাক্রমের অনুপযোগিতা, বিদ্যালয়ের অস্বাভাবিক কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা।
বয়ঃসন্ধি শুরুর সাথে সাথে কিশোর কিশোরীদের মধ্যে যে পরিবর্তনগুলো ঘটতে থাকে সে সম্পর্কে তাদের তেমন কোন ধারণা না থাকায় অনেক ছেলে মেয়েই এ বিষয়ে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ে। এ উৎকণ্ঠা মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। আবার বড়রা তাদের তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে না দিয়ে বলে যে, তোমরা এখনও ছোট - তাই এমন কাজ তোমাদের ওপর ছেড়ে দেয়া যায় না। আবার পরোক্ষনেই হয়তো বলেন, এত বড় হয়ে গেছ তবুও তোমাদের দুষ্টুমি যাচ্ছে না। অর্থাৎ একই শিশু অবস্থা ও ঘটনার প্রেক্ষিতে দু রকমের কথা শুনাচ্ছে। এর ফলে তারা নিজেদের ভুমিকা সম্পর্কে এক বিরাট দন্দে নিপতিত হয়।
আর মা-বাবা যদি সচেতন থাকেন তবে তাদের কিশোর কিশোরীদের সন্তানের বেলায় এমন সমস্যা খুব কমই সৃষ্টি হয়। কৈশোরকাল হচ্ছে আবেগ ও উচ্ছ্বাসের সুনজর ও সমবেদনার দৃষ্টিতে না দেখার কারনেই যত সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং  কিশোর কিশোরীরা বড়দের অবহেলার কারনে এক সময় বিপথগামী হয়ে যায়।
আর এ বয়সের ছেলেমেয়েরা সভাবসিদ্ধ কারনেই সর্বদা অস্থির চিত্ত, কর্মচঞ্চল, উচ্ছৃংখল এবং  বিরোধী ভাবাপন্ন হয়ে যায়।
গবেষকদের মতে এই বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা সত্তেও অনেক কিশোর- কিশোরী অত্যন্ত দক্ষতার মাধ্যমে এগুলোর সাথে সঙ্গতি বিধান করতে পারে।  তাছাড়া তাদের ব্যক্তিত্ব, মানসিক কাঠামো, আদর্শ ও নৈতিক শিক্ষার প্রভাব ইত্যাদি কিশোর- কিশোরীদের আত্মনিয়ন্ত্রনের সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করে। তবে পরিবেশগত বৈরিতা থাকলে কিশোর মানসে অসুস্থ প্রবণতার সৃষ্টি করে।
বয়ঃসন্ধিকাল এবং কিশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সটি উত্তেজনার প্রবল আবেগ ও উচ্ছ্বাসে জীবনের ঝুঁকি নেয়ার বয়স। এ বয়স অদম্য দঃসাহসে সব বাঁধাকে পেরিয়ে যাওয়ায় এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর । এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, আঘাত- সংঘাতের  মধ্যে রক্ত শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। পাশপাশি সমাজ জীবনের নানা বিকার, অসুস্থতা ও সর্বনাশের অভিঘাতে এ বয়স আবার হয়ে উঠতে পারে ভয়ঙ্কর। বিকৃতি ও বিপর্যয়ের অজস্র আঘাতে ক্ষতবিক্ষত ও নিঃশেষিত হতে পারে সহস্র প্রান।

https://tofazzelbd.blogspot.com/
তারপর সহায়ক পরিবেশ পেলে এরা সকল দুর্যোগ মোকাবিলা করে দুর্বার গতিতে নতুন জীবন রচনার স্বপ্নে সামনের দিকে  এগিয়ে যায়। অর্থাৎ কিশোর কিশরিদেরকে সমস্যার হাত থেকে নিষ্কৃতি দেয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা কার্যক্রম প্রয়োজন ।
এ কার্যক্রমের প্রধান লক্ষ্যই হলো বড়দের মধ্যে কিশোর মানসিকতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো। এখানে একটি কথা অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে, সমাজে কিশোর কিশোরীরা যতটা না সমস্যা সৃষ্টি করে তার চেয়ে বড়রাই অনেক গুন বাড়িয়ে যে সমস্যা অনুভব করে। তাই যদি সঠিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বড়দের মধ্যে কৈশোর বিষয়ক জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো যায় তবে সমস্যার অর্ধেকই হয়তো দূর হয়ে যাবে। তাছাড়া নির্দেশনা বিষয়ক কিছু নীতিমালা সম্পর্কে ও তাদের ধারণা দিতে হবে।
কিশোর কিশোরীদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনার জন্য বয়স্কদের কয়েকটি করনীয় এখানে আলোচনা করা হলো । এগুলো সম্পর্কে যদি আমরা সদা সচেতন থাকি তবে বহুলাংশেই সমাজ থেকে কিশোর সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

  • কিশোর-কিশোরীদের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা ।
  • সমাজে কিশোর কিশোরীদের মর্যাদাকে ওপরে তুলে ধরা। 
  • তাদের আবেগ ও অনুভূতিগুলো সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করা।
  • কিশোর-কিশোরীদের কার্যক্ষমতায় পূর্ণ আস্থা রাখা।
  • বয়স উপযোগী  বিভিন্ন কাজে তাদের নিয়োজিত রাখা।
  • শিশু কিশোরদের অক্ষমতাগুলোর প্রতি বিদ্রুপ বা কঠাক্ষ না করা।
  • যথাপযুক্ত  পুরস্কার ও প্রশংসার মধ্যে কিশোরদের উৎসাহিত করা।
  • বস্কদের সাথে অধিক মেলামেশার করার সুযোগ করে দেয়া।
  • বিদ্যালয়ের কার্যক্রম ও পরিবেশ কিশোর কিশোরীদের উপযোগী করে প্রণয়ন করা।



No comments

Powered by Blogger.