Header Ads

বয়ঃসন্ধিকাল ও কৈশোরের সমস্যা



কৈশোর মানুষের জীবনের একটি বিকাশমান স্তর। এ সময় ব্যাক্তি তার কৈশোর অতিক্রম করে পূর্ণ বয়স্কতা তথা প্রজনন ক্ষমতা অর্জনের দিকে পা বাড়ায়। সাধারণত ১১/১২ বছর বয়স থেকে এ সময় শুরু হয় এবং ১৮/১৯ বছর পর্যন্ত তা চলতে থাকে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এর শুরু ও শেষ কিছুটা আগে পরে হতে পারে। কিশোর বয়সটি দ্রুত বর্ধনের সময়, এ সময় কিশোর কিশোরীরা হঠাৎ করে শারীরিক দিক দিয়ে বেড়ে ওঠে।
কখনও কখনও দেখা যায় কিশোর কিশোরীরা সমাজের কাছে তাদের যথাযথ মর্যাদা পায় না। সমাজ মনে করে এ বয়সটি এক ঝর-ঝঞ্জারকাল বিধায় তারা সমাজের জন্য বিভিন্নমুখী সমস্যা ডেকে আনে। অপরাধ প্রবণতাই যেন তাদের ধর্ম।
মূলত এরূপ ধারণা কিশোর কিশোরীদের প্রতি আমাদের মস্তবড় এক অবিচার। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, কৈশোর একটি অবস্তান্তরের কাল হলেও সবার ক্ষেত্রে তা মোটেও ঝর-ঝঞ্জারকাল নয়, বরং এ সময়কে তারা বিভিন্নভাবে উপভোগ করে সমাজে নিজেরদের অবস্থানকে বিভিন্ন উপায়ে সুদৃঢ় করতে শুরু করে।
মূলত যৌনতা অর্জনের সময় তথা বাল্যকাল থেকে যৌবনে পদার্পণের অবস্থার সময়কেই কৈশোরকাল বলা যায়। এ সময়টিকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
১। বয়ঃসন্ধি
২।প্রারম্ভিক কৈশোর
৩। শেষ কৈশোর

বয়ঃসন্ধি

এ সময়টি বাল্য থেকে কৈশোরে যাওয়ার এক অতি সংক্ষিপ্ত এবং মানব জীবনের অতি  গুরুত্বপূর্ণ সময়। মূলত বয়ঃসন্ধিকে বাল্য বা কৈশোর থেকে কোনোভাবেই আলাদা করা যায় না । কারন বাল্য শেষ হওয়ার আগেই বয়ঃসন্ধি শুরু হয় এবং প্রারম্ভিক কৈশোরের সূচনার বেশ কিছুটা পরে গিয়ে এর সমাপ্তি ঘটে। তবে মানব জীবনের শারীরিক পরিবর্তনগুলো প্রধানত বয়ঃসন্ধিকালেই অধিক হারে সংঘটিত হয়ে থাকে। মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল সাধারণত ১১-১৫ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে তা স্থায়ী হয় ১২-১৬ বছর পর্যন্ত। কখনও কখনও মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল ৯ বছর থেকে শুরু হত্র পারে এবং ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকাল ১৮ বছর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

প্রারম্ভিক কৈশোর

সম্পূর্ণ কৈশোর কালটিকে যদি ১১/১২ থেকে ২১ বছর পর্যন্ত ধরা হয়, তবে এর প্রথম অংশকে বলা যায় প্রারম্ভিক কৈশোর। মনোবিজ্ঞানী হারলক তার গ্রন্থে কইশরকে ২১ বছর পর্যন্ত বিস্তৃত করেছেন। এটি অবশ্য আমেরিকার কিশোরদের বেলায় প্রযোজ্য, আমাদের অঞ্চলের বেলায় হয়তো এ সময়কে সর্বশেষ ১৯ বছরের ঊরধে ধরা যায় না । সুতরং কৈশোরের প্রথম সময় থেকে ১৫-১৫ বছর পর্যন্ত সময়কে প্রারম্ভিক কৈশোর বলা হয়। বয়ঃসন্ধিতে পরিবর্তনের যে তীব্রতা থাকে এবং আচারনে যে বৈপরীত্য ঘটে কৈশোরের প্রারম্ভিক কৈশোর পর্যায়ে গিয়ে ততটা আর থাকে না । অনেকটা ক্ষীণ হয়ে যায়।

শেষ কৈশোর

 প্রারম্ভিক কৈশোরের পর্বথেকেই কিশোরেরা অনেকটা ধীর স্থির হয়ে আসে। শারীরিক এবং মানসিকভাবে তারা পরিণত যুবকের মতো আচরণ করে। এ সময় দৈহিক ভাবে ছেলেমেয়েদের মধ্যে আর কোন পরিবর্তন ঘটে না এবং তারা পরিপক্বতার প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে । আমাদের অঞ্চলের জন্য ১৬-১৮ বছর পর্যন্ত সময়কে শেষ কৈশোর ধরা যায়।
জৈবিকভাবে কিশোর কালটি যেমনই হোক না কেন সামাজিকভাবে এটি একটি সমস্যাযুক্ত সময়। সমাজের বড়রা প্রায় সবসময়ই মনে করে কৈশোর হোল একটি ঝড় ঝঞ্জার সময় এ বয়সের ছেলে মেয়েদের মতো আপদ বালাই আর নেই, তারা বড়দের মোটেও মান্য করে না, বিদ্রোহী ভাবাপন্ন হয় এবং উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করে। আসলে এ মনোভাব পোষণকারীরা ভুলেই জান যে তারা এক সময় কিশোর ছিলেন এবং তারা তখন এর চেয়েও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছেন।
মূলত এরূপ ধারণার পেছনে কোন যৌক্তিক কারন নেই। বিভিন্ন সামাজিক এবং পারিপার্শ্বিক কারনে কিছু সংখ্যক ছেলে মেয়ের মধ্যে এরূপ আচরণ দেখা গেলেও অধিকাংশই এ দোষ তথা আচরণ থেকে মুক্ত। তবে জীবনের অন্য সময় থেকে কৈশোর কিছুটা উত্তেজনাপুরন,আবেগপ্রবন এবং মানসিক প্রতিক্রিয়াশীল হয়।


কৈশোরের শারীরিক বিকাশ তথা পরিবর্তন 

বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই মানুষের মধ্যে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরবরতন শুরু হয়। এ পরিবর্তন অত্যন্ত দ্রুত হয়। জৈবিক ভাবে এ পরিবর্তনকে চারভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
১। শরীরের আকারগত পরিবর্তন
২।। শরীরের অনুপাতগত পরিবর্তন
৩। প্রত্যক্ষ যৌন বৈশিস্ট্যের বিকাশ
৪। পরোক্ষ যৌন বৈশিস্ট্যের বিকাশ

শরীরের আকারগত পরিবর্তনঃ 

বয়ঃসন্ধিকারে মানুষের শারীরিক বৃদ্ধিতে আকস্মিক এক পরিবর্তন দেখা দেয়। এ সময় উচ্চতা এবং ওজনে বিরাট এক পরিবর্তন ঘটে। এক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় সাধারণত মেয়েরা দ্রুত বাড়ে। তবে ১৬ বছরের দিকে গিয়ে উভয়েই সমান হয় এবং তারপর ছেলেরা মেয়েদের ছাড়িয়ে যায়। কৈশোরের এই দ্রুত বর্ধনকে আকস্মিক বৃদ্ধি বলে।
এই বর্ধন কারও কারও ক্ষেত্রে কিছুটা আগে পরে হতে পারে। বয়ঃসন্ধির শেষের দিকে এ বর্ধনের হার ক্রমেই কমতে থাকে। মেয়েরা তাদের প্রথম মাসিক(রক্তস্রাব) শুরু হওয়ার দু এক বছরের মধ্যেই তাদের উচ্চতার শেষ সীমায় পৌঁছে জায়।দেখা যায় ১৬-১৮ বছর বয়সে মেয়েদের এবং ১৮-১৯ বছর বয়সের ছেলেদের বর্ধন শেষ হয়ে যায়। প্রথম দিকে বৃদ্ধিটা যেমন লক্ষ্য করা যায়, শেষ দিকে তা আর তেমন চোখে পরে না। কৈশোরের দ্রুত বৃদ্ধির ফলে হাড়ের পুষ্টি ঠিকমত হয় না এবং হাড় চিকন হয়ে যেতে থাকে, রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং হজমের সমস্যা হয়। ছেলেমেয়েরা এ সময় দুর্বল হয়ে পরে। তবে এ সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারন নেই কেননা এ সমস্যাগুলো স্থায়ী নয়, আস্তে আস্তে তা এমনিতেই কেটে যায়।

শরীরের অনুপাতগত পরিবর্তন

বয়ঃসন্ধিতে শারীরিক পরিবর্তন দ্রুত হলেও তার মধ্যে কোন সামঞ্জস্য থাকে না। বিশেষ করে বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণের ফলে শারীরিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বৃদ্ধি একসাথে সম্পাদিত হয় না এবং এগুলোর মধ্যে আনুপাতিক তারতম্য দেখা দেয়। সে কারনেই কিশোরদের একসময় খুব উটকো বা বেমানান দেখা যায়। যৌবনাগমের পরিপূর্ণতা হলে এ অসমাঞ্জতা দূর হয়ে যায়।

প্রত্যক্ষ যৌন বৈশিস্ট্যের বিকাশ

কৈশোরের প্রধান বৈশিস্ট্যেই হল প্রজনন বা যৌন ক্ষমতার বিকাশ। যেমন- মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রথম মাসিকের আগমন ও যৌনাঙ্গের পরিপূর্ণতা। ছেলেদের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গের বৃদ্ধি ও স্বপ্নদোষ প্রত্যক্ষ প্রত্যক্ষ যৌন বৈশিস্ট্যের অন্তর্গত। এ সময় বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে কিছু শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। মাসিকের কারনে রক্ত স্বল্পতা, মাথা ঘুরানো, বমিবমি ভাব, তলপেটে ব্যাথা ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে মাসিক নিয়মিত হয়ে যাওয়ার পর এ সমস্যাগুলো আর থাকে না।

 পরোক্ষ যৌন বৈশিস্ট্যের বিকাশ

 কৈশোরের বিকাশকালে কিছু বৈশিস্ট্যে আছে যে গুলো সরাসরি যৌনাঙ্গের সাথে জড়িত নয় কিন্তু লিঙ্গভেদকে প্রকট করে তোলে সেগুলোকেই পরোক্ষ যৌন বৈশিস্ট্যে বলা চলে। যেমন- উভয়ের মধ্যে যৌন চিহ্ন ফুটে উঠতে থাকে। ছেলেদের মধ্যে দাড়িগোঁফ গজায়,জউন লোম গজায়, কাঁধ চওড়া হয়, চেহারায় পুরুষ ভাব ফুটে ওঠে ইত্যাদি আবার মেয়েদের মধ্যে স্রনের বিকাশ, নিতম্বের বৃদ্ধি, যৌন লোম গজায়, চেহারায় মেয়েলি কমনীয়তা দেখা দেয় ইত্যাদি। এছাড়াও উভয়ের ক্ষেত্রেই গলার স্বর পরিবর্তন হওয়া এবং মুখে ব্রন দেখা দেয়াও পরোক্ষ যৌন বৈশিস্ট্যেরেই লক্ষন।
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যৌন  বৈশিস্ট্যের বিকাশ ঘটার সাথে সাথে ছেলেদের মধ্যে লজ্জা বা সমস্যার সৃষ্টি না হলেও অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েদের সচেতনতার অভাবে এবং পূর্ব থেকে ধারণা না থাকার কারনে হটাৎ  তাদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং মেয়েদের প্রথম মাসিকের আবির্ভাব হওয়ার সাথে সাথেই এই ভেবে সে লজ্জা ও ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে যায় যে, এটি একটি অবাঞ্ছিত বাড়তি ঝামেলা ও একটি মারাত্মক রোগ।
 আসলে তা কিন্তু মোটেও ঠিক নয়। অভিভাবক মহল বিশেষ করে মেয়েদের জন্য মা, বড় বন, ভাবী এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগন এ ব্যাপারে তাদেরকে সচেতন করার জন্য বলতে পারে যে মেয়েদের মাসিক একটি অতি স্বাভাবিক প্রকৃতিগত স্বাভাবিক ব্যাপার যা  মা হওয়ার যুগ থেকেই চলে আসছে এতে  লজ্জা বা ভয়ের কোন কারন নেই।


শেষ পর্যায়ে বলা যায় যে, এ বয়সে ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা থাকা বিচিত্র কিছু নয়। স্বাভাবিক কারনে তারা নানা প্রকার শারীরিক , মানসিক, আবেগিক ও সামাজিক সমসায় পতিত হয়। তবে কিশোর কিশোরীদের এসব নিজস্ব সমস্যা ছাড়াও বড়দের একঘেয়ামির কারনে তারা আরও বেশি সমসায় পতিত হয়। তাই এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ হচ্ছে বড়দের মধ্যে কিশোর সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সেই সাথে কিশোর কিশোরীদেরকে তাদের সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করার জন্য আগে থেকেই তাদের সাথে এ বিষয়ে খোলামেলা করে তাদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে হবে। তাতে কিশির কিশোরীরা বিপদ্গামি হবে না এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন বিবর্তনের কারনে তারা শংখিতু হবে না।




1 comment:

  1. Great post.I Found your article very interesting and helpful.. Well explained.. Thanks for sharing this amazing information.

    ReplyDelete

Powered by Blogger.